শক্তির বিভিন্ন রুপ

সপ্তম শ্রেণি (মাধ্যমিক) - বিজ্ঞান - বিজ্ঞান অনুসন্ধানী পাঠ | | NCTB BOOK
13
13

আমাদের জীবনে আমরা প্রতি মুহুর্তে নানা ধরনের শক্তি ব্যবহার করি। যেমন পানি গরম করার জন্য তাপশক্তির প্রয়োজন হয়, দেখার জন্য আমাদের আলোশক্তি লাগে, আমরা শুনি শব্দ শক্তি দিয়ে। বৈদ্যুতিক শক্তি দিয়ে আমরা যন্ত্রপাতি চালাই আবার রাসায়নিক শক্তি ব্যবহার করে ব্যাটারি সেলে বিদ্যুৎ তৈরি করি। ভারী নিউক্লিয়াস ভেঙে আমরা যে নিউক্লিয়ার শক্তি পাই, সেটা দিয়েও বিদ্যুৎ শক্তি তৈরি করি। খাবার থেকে পুষ্টি নিয়ে আমাদের শরীরে শক্তি তৈরি হয়, আমরা কাজকর্ম করি! 

শক্তির সবচেয়ে সাধারণ রূপ হচ্ছে যান্ত্রিক শক্তি, বস্তুর অবস্থান, আকার এবং গতির কারণে যে শক্তি পাওয়া যায় তাকেই যান্ত্রিক শক্তি বলে। যান্ত্রিক শক্তির দুটি রূপ হতে পারে গতিশক্তি এবং স্থিতিশক্তি।

গতিশক্তি: আমরা আগে বলেছি, কাজ করার ক্ষমতা হচ্ছে শক্তি। আমরা সবাই লক্ষ করেছি কোনো বস্তু গতিশীল হলে সেটা অন্য বস্তুকে ধাক্কা দিয়ে সেটাকেও খানিকটা দূরত্ব ঠেলে নিয়ে যেতে পারে। অন্য বস্তুকে ঠেলে খানিকটা দূরত্ব নিয়ে যাওয়ার অর্থ নিশ্চয়ই সেখানে কাজ হয়েছে! কাজেই আমরা নিশ্চিতভাবে বলতে পারি গতির জন্য বস্তুর ভেতরে একধরনের শক্তি হয় এবং সেটাকে বলে গতিশক্তি। একটা বস্তুর ভর যদি হয় m এবং তার গতিবেগ যদি v হয় তাহলে তার গতি শক্তি হচ্ছে

12mv2
কাজেই তোমরা নিশ্চয়ই বুঝতে পারছ, গতিবেগ যদি দ্বিগুণ হয়ে যায় তার গতিশক্তিও তখন কিন্তু দ্বিগুণ হয় না, তার গতিশক্তি হয় চার গুণ বেশি। সেজন্য আমরা রাস্তাঘাটে যে ভয়ংকর দুর্ঘটনা ঘটতে দেখি সেখানে যে ক্ষয়ক্ষতি হয়, তার প্রধান কারণ প্রয়োজনের বেশি গতিশক্তি। একটা বাস-ট্রাক বা গাড়ি যখন প্রচণ্ড বেগে ছুটতে থাকে তখন তার অনেক বড় গতিশক্তি থাকে। দুঘর্টনার সময় এই পুরো শক্তিটার কারণে গাড়ি ভেঙেচুরে যায়, প্রচণ্ড ধাক্কায় মানুষ মারা যায়।

স্থিতিশক্তি: বল প্রয়োগ করে কোনো কিছুকে ঠেলে আমরা যদি খানিকটা দূরত্ব নিয়ে যাই, অর্থাৎ তার উপর কাজ করা হয়, তাহলে তার ভেতরে খানিকটা শক্তি দিয়ে দেওয়া হয়। যদি তখন বস্তুটির গতিবেগ বেড়ে যায়, আমরা বলতে পারি, কাজটি গতিশক্তিতে রূপান্তরিত হয়েছে, যদি ঘর্ষণের কারণে উত্তপ্ত হয়ে যায় আমরা বলি কাজটুকু তাপ শক্তিতে পরিণত হয়েছে। কিন্তু আমরা যদি বল প্রয়োগ করে কোনো বস্তুকে উপরে তুলে কোথাও রেখে দেই, তাহলে সেটি কিন্তু গতিশীল হয় না, উত্তপ্তও হয় না। যেহেতু এটার উপর কাজ করা হয়েছে, তাই এটি নিশ্চয়ই খানিকটা শক্তি পেয়েছে, তাহলে শক্তিটুকু কোথায় গিয়েছে? একটু চিন্তা করলেই তুমি বুঝতে পারবে শক্তিটুকু হারিয়ে যায়নি। এটি স্থিতিশক্তি হিসেবে বস্তুটির ভেতরেই আছে। তুমি বস্তুটিকে উপর থেকে নিচে ফেলে দিলেই দেখবে, সেটি যতই নিচে পড়তে থাকবে, ততই গতিশীল হতে থাকবে, অর্থাৎ স্থিতি শক্তিটুকু গতিশক্তিতে রূপান্তরিত হতে শুরু করবে।

অর্থাৎ পাথরটা যখন উপরে ছিল, তখন এই “উপরে” অবস্থানের জন্য তার মধ্যে এক ধরনের বিভব বা স্থিতিশক্তি জমা হয়েছিল।

ছুটে যাওয়া ক্রিকেট বলে অনেক গতিশক্তি সঞ্চিত থাকতে পারে।
Content added || updated By
Promotion